সদ্য হারিয়েছেন মেয়েকে। ৮ মাস আগে হারিয়েছেন স্বামীকে। এবার মাথার উপর ছাদটা হারাতে চলেছেন সুতন্দ্রার মা তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায়। একেই স্বামীকে হারানোর আট মাসের মধ্যে মেয়েকে হারানোর শোক। তার উপর আবার দেনায় ডুবে রয়েছে চন্দননগরের চট্টোপাধ্যায় পরিবার। সোমবার পরিবারের লোকেরা যখন সুতন্দ্রার দেহ ফেরার অপেক্ষায়, ব্যাঙ্ক থেকে লোক এসে তাদের দোকানে ঝুলিয়ে দিয়ে গিয়েছে নোটিস। তাতে লেখা, আইন মেনে প্রতীকী দখল নেওয়া হলো এই দোকানের। এই দোকান কেনা বা বিক্রি করা যাবে না। সুতন্দ্রার মা তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমার বাড়ি এবং দোকান, দুই-ই বন্ধক আছে।’ মাথার উপর থেকে ছাদটাও না এ বার হারিয়ে যায়, আশঙ্কায় তিনি। সুতন্দ্রার বাবা সুকান্ত চট্টোপাধ্যায় ক্যান্সারের রোগী ছিলেন। চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। তার আগে লোনও নিতে হয়েছিল। তনুশ্রী জানান, চন্দননগর নাড়ুয়ায় তাঁদের বাড়ি, চন্দননগর পালপাড়ায় ধরগলি এলাকার দোকান, দুই-ই বন্ধক রাখতে হয়। প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা দেনা রয়েছে এখনও। একদম গভীর গাড্ডায় পরেছেন তিনি।
তিনি আরও জানান, মেয়ে ইভেন্টের কাজ করে সব রকম ভাবে টাকা শোধ করার চেষ্টা করছিলেন। তারই মধ্যে এই মর্মান্তিক ঘটনা। শুধু সুতন্দ্রার মা নন, নাতনিকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বয়স্ক ঠাকুমা কল্পনা চট্টোপাধ্যায়ও। ভয় পাচ্ছেন, এ বার মাথার উপরের ছাদটাও না চলে যায়। সব হারিয়ে পথে না বসতে হয়। সুতন্দ্রাদের প্রতিবেশী রুমেলা লাহা জানান, এই বাড়ি যে বন্ধক রাখা হয়েছে, প্রথমে পরিবারের লোকজন জানতেন না। সুতন্দ্রার বাবা মারা যাওয়ার পর ব্যাঙ্ক থেকে ফোন আসে, তখন জানতে পারেন সবটা। সুতন্দ্রা সব সময় চেষ্টা করেছেন, লোন মিটিয়ে যত তাড়াতাড়ি মুক্ত হওয়া যায়। দোকানটা বিক্রি করে দেওয়ারও পরিকল্পনা ছিল। মা, বয়স্ক ঠাকুমার কাছে সুতন্দ্রাই যেন অভিভাবক। মা, বাবাদের বয়স হলে, ঠিক যেমনটা মধ্যবিত্ত পরিবারগুলিতে হয়।