Travonews.in

বাদুড় ও ইঁদুর বহন করে প্রাণঘাতী প্রচুর ভাইরাস

  সেই বহু বছর আগের থেকেই বাদুড় আর ইঁদুর নিয়ে মানব সভ্যতার ভয়। ইঁদুর প্লেগের বাহক। আর তাতেই এক সময় বিশ্বের বহু মানুষের প্রাণ গেছে। এখন অবশ্য প্লেগ অতীত। বর্তমান হলো করোনা, নিপা,ইবোলা ইত্যাদি। করোনার কারণে পৃথিবীর প্রায় ২টো বছর থমকে গিয়েছিলো। প্রাণ হারিয়েছে অজস্র মানুষ। সেই ধাক্কা একটু সামলে ওঠার পরেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) নিপা ও ইবোলা নিয়ে সতর্কবার্তা জারি করেছে। দক্ষিণ ভারতে ইতিমধ্যে নিপা আক্রান্ত রুগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। এই মুহূর্তে ভারতের স্বাস্থ্য সংস্থা নিপা নিয়ে সতর্ক বার্তা জারি করেছে। এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে এখন বিশ্ববাসী। কিন্তু কোথা থেকে হঠাৎ এইসব নতুন রোগের আবির্ভাব? –‘ ভাইরাস’।

  ওই একটি শব্দ এখন বিশ্বের ত্রাস। কিন্তু শরীর বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসের বাহক তো থাকতেই হবে। এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে তাতে বলা যায়, ‘বাদুড়’ এখন সভ্য মানুষের ত্রাস।

করোনা ভাইরাসের সূত্রপাত চিনে। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে চিন থেকে সারা বিশ্বে ছাড়ালেও ওই ভাইরাসের বাহক বাদুড়। সামান্য বাদুড় সমস্ত বিশ্বের শত্রু হয়ে উঠেছিল তখন। বাদুড় ভাইরাস বহন করে কিন্তু নিজে সংক্রামিত হয় না। এটাও একটা বিস্ময়। শুধু করোনা নয়, আগে এই বাদুড় তত্ত্ব বার বার করে শোনা গেছে ভাইরোলজিস্টদের কন্ঠে। তাঁরা মনে করেন বহু বছর আগের থেকেই এই বাদুড় বহন করে একাধিক মারণ রোগের ভাইরাস।

  মানব সভ্যতা মূলত গবেষণামূলক সভ্যতা। তাই প্রতিদিন চলেছে নানা গবেষণা। সাম্প্রতিককালে গবেষণায় জানা গেছে নিপা বা ইবোলা রোগের বাহক সেই বাদুড়। শিকাগোর ফিল্ড মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রি-র পশু বিশেষজ্ঞ ব্রুশ পিটারশনের বক্তব্য, বাদুড়ের মধ্যে কিছু বিরল বৈশিষ্ট রয়েছে, যার জন্য প্রচুর ভাইরাস ওরা বহন করতে পারে। মানব সভ্যতা জানতে চায় – কি সেই বৈশিষ্ট্য?

   বাদুড় অধিকাংশ সময়ই একসঙ্গে অনেকে মিলে থাকে। টেক্সাসে এরকম একটি গুহা রয়েছে, যেখানে গরমকালে ১ কোটির বেশি বাদুড় বাস করে। জন্মও নেয় অজস্র বাদুড়। গবেষণায় জানা যায় বিশ্বের প্রায় সর্বত্র বাদুড় আছে। তবে জিম্বাবুয়েকে বাদুড়ের আতুর ঘর বলা হয়।

  বিশ্বব্যাপী চলেছে ভাইরাস ও বাদুড় নিয়ে গবেষণা। সেই গবেষণায় দেখা গেছে, ভাইরাল বৈচিত্র্যে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে রোডেন্টিয়া (ইঁদুর) এবং চিরোপটেরা (বাদুড়) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বে সমস্ত স্তন্যপায়ী প্রজাতির ২২ শতাংশ হলো বাদুড়। পৃথিবীতে ১২০০ প্রজাতির বেশি বাদুড় আছে। বাদুড় আবাধে উড়তে পারা একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং তাদের জীবনের বেশিরভাগ সময়ই তারা উড়ন্ত অবস্থায় থাকে। প্রাচীন জিম্বাবুয়েতে বাদুড়কে ‘উড়ন্ত শয়তান’ বলা হতো। বিজ্ঞানীরা বার বার দেখিয়েছেন যে, একটি বাদুড় মারাত্মক ভাইরাস বহন করলেও নিজে অসুস্থ না হয়ে অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম। বাদুড় দলে দলে মুহূর্তে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যায়। আর ওদের সঙ্গে ছড়িয়ে পরে প্রাণঘাতী ভাইরাস। বিশ্ব কখনো বাদুড়মুক্ত হবে না। তাই সচেতন হতে হবে মানুষকে। করোনার মতো নিপা বা ইবোলার প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত মানব সভ্যতার ত্রাসের নাম – ‘বাদুড়’।

Picture of ট্রাভো নিউজ
ট্রাভো নিউজ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *