পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমে অবস্থিত পুরুলিয়া জেলা মানেই ঢেউ খেলানো মালভুমি ও পাহাড়, জলপ্রপাত, বিস্তীর্ণ জঙ্গল ,নদী জলাশয় ইত্যাদি মিলিয়ে একটা অনুপম সৌন্দর্য। কিন্তু পর্যটকদের কাছে পুরুলিয়া মনে শুধু অযোধ্যা পাহাড়, গড়-পঞ্চকোট ইত্যাদি।কিন্তু এর বাইরে পুরুলিয়ার এমন কিছু অফবিট জায়গা আছে, যা আপনার মন ভুলিয়ে দেবে। আজ তেমনি কিছু পুরুলিয়ার অফবিট বেড়ানোর জায়গা।
* চেলিয়ামা – পুরুলিয়ার একটা অন্যতম ভালো জায়গা চেলিয়ামা।কিন্তু বেশিরভাগ পর্যটকদের কাছে অপরিচিত।
চেলিয়ামা রাধা-গোবিন্দ মন্দিরের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত। মন্দিরটি ১৭ শতকে নির্মিত হয়েছিল এবং টেরাকোটা স্থাপত্য দ্বারা প্রভাবিত ভাস্কর্যগুলির কারণে এই অঞ্চলে স্থাপত্যের জন্য বিস্ময়কর স্থান। খিলানপথের উপরের প্যানেলে কৃষ্ণলীলার দৃশ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এই মন্দিরটির গঠন শৈলী অনেকটাই বিষ্ণুপুর ঘরানার।
* সাহেব বাঁধ – গল্পে শোনা যায় ব্রিটিশযুগে কর্ণের টিকলির প্রচেষ্টায় এক জলাশয়ে এই বাঁধ নির্মিত হয় তাই তার নাম সাহেববাঁধ। প্রায় ৫০ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই বাঁধ।কর্নেল টিকলি ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ প্রশাসনের অধীনে এই স্থানটি নির্মাণের দায়িত্ব দিয়েছিলেন।এই জলাধার একটি ইতিহাস আছে।কর্নেল টিকলি বেশ কয়েকজন কয়েদিকে এই জলের ঝরনার জন্য খনন শুরু করতে বাধ্য করেন। যে কারণে এই বিশাল ট্যাঙ্কটি তৈরি করতে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় লেগেছে।এই স্থানটি এখন পুরুলিয়ার অন্যতম প্রধান পর্যটন আকর্ষণ। যাঁরা এখানে যান নি তাঁদের মুগ্ধ করবে এই বাঁধ।
* জয়চন্ডী পাহাড় – সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশ’ এর জন্য হয়তো অনেকের কাছে এই পাহাড় এখন পরিচিত। এই পাহাড় পুরুলিয়ার অন্যতম আকৰ্ষণ। জয়চন্ডি পাহাড় জয়চন্ডী রেল স্টেশন থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আদ্রা স্টেশন থেকেও এখানে চলে আসা যায়। হীরক রাজার দেশ ছাড়াও আরো বেশ কিছু ছবির শুটিং এখানে হয়েছে। এই পাহাড়ের ওপরে আছে জয়চন্ডী মন্দির ও বজরং মন্দির। ওই মন্দির দুটি ভক্তদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। আগের থেকে যোগাযোগ করতে পারলে ওখানে রাত্রিবাসও করা যায়।
- কাশীপুর রাজবাড়ী – এই রাজবাড়ীর সাথে মাইকেল মধুসূদন দত্তের ইতিহাস জড়িত আছে। মাইকেল একসময় এই রাজবাড়িতে চাকরি করতেন। প্রতিবছর রাজবাড়িটি দুর্গাপুজোর সময় সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেয়া হয়।
এছাড়াও পুরুলিয়ার বহু সুন্দর জায়গা আপনি স্বচ্ছন্দে ঘুরে আসতে পারেন।
যাওয়া – কলকাতা থেকে গাড়িতে ৬/৭ ঘন্টায় পুরুলিয়া পৌঁছানো যায়। দিল্লি রোড ধরে দুর্গাপুর বা আসানসোল হয়ে পৌঁছানো যায় পুরুলিয়া শহরে। পাশাপাশি, ধর্মতলা থেকে অনেক বাস পুরুলিয়ার উদ্দেশ্যে ছাড়ে। ট্রেনে আসতে গেলে হাওড়া থেকে চক্রধরপুর এক্সপ্রেস নেওয়া যেতে পারে।
থাকা – সবচেয়ে ভালো হয় পুরুলিয়া স্টেশনের পাশের অজস্র হোটেলের মধ্যে একটি হোটেল দু’দিনের জন্য বুক করুন। ওদের বললেই ওরা ভাড়া গাড়ির ব্যবস্থা করে দেবে। গাড়ি নিয়ে দু’দিন সমস্ত পুরুলিয়া আপনি স্বচ্ছন্দে ঘুরে নিতে পারেন।