বাঁশদ্রোণী কান্ড সরকারের কাছে কি কোনো অশুভ ইঙ্গিত?

আর জি কর কাণ্ডে জুনিয়র চিকিৎসক সহ নাগরিক মহল রাজ্য সরকরের উদাসীনতা ও সমস্ত ঘটনা ধামা-চাপা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে । এর মধ্যে সাগরদত্ত হাসপাতালে চিকিৎসক নিগ্রহ পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগকে আরও স্পষ্ট করেছে। সেই ঘটনার রেশ যখন চলছে, যখন জুনিয়র চিকিৎসক সহ মধ্যবিত্ত নাগরিক সমাজ সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে ঠিক তখন বাঁশদ্রোণী কাণ্ডে উন্মত্ত হয়ে উঠেছে কয়েক হাজার মানুষ।

মহালয়ার পুণ্য তিথিতে বাঁশদ্রোনিতে এক স্কুল পড়ুয়ার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কয়েক হাজার মানুষ স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলার ও পুলিশের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন। বুধবার সকালে কলকাতা পুরসভার ১১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এক নবম শ্রেণির ছাত্র কোচিং সেন্টারে যাচ্ছিল। সেই সেন্টারের কাছে চলছিল রাস্তা সারাইয়ের কাজ। সেখানে থাকা এক জেসিবি ওই ছাত্রকে ধাক্কা মারে। পিষে দেয় গাছের সঙ্গে। মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে ওই ছাত্রের। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি। এই ঘটনার পরেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাঁশদ্রোণী। পাটুলি থানার ওসিকে সামনে পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পারেন স্থানীয় মানুষ। তারা ওসিকে আটক করে রাখেন। এর সঙ্গে তাদের আরও অভিযোগ এলাকায় দেখা মেলেনি স্থানীয় কাউন্সিলর অনিতা কর মজুমদারের। ক্ষোভ জমেছে রাস্তার বেহাল দশা নিয়ে। পুলিশকে তারা সারাদিন ঘেরাও করে রাখেন। এর পরে সন্ধ্যার সময় ঘটনার নতুন মোড় নেয়। গ্রেফতার করা হল বিজেপি নেত্রী রুবি দাসকে। দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু তাকে কেন গ্রেফতার করা হয়েছে তা নিয়ে পুলিশের কাছে কোনো সদুত্তর ছিল না।

এর মধ্যে দেখা যায় একদল দূরবৃত্ত পুলিশকে ঘেরাও মুক্ত করতে উপস্থিত হয় ওখানে। তারা স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পারেন। স্থানীয় কাউন্সিলারের একজন কাছের মানুষকে এলাকার মানুষ তাড়া করেন। তিনি কোনো রকমভাবে দৌড়ে পালন।

বিজেপি নেতৃকে গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়তেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে বিজেপি কর্মীরা। দলীয় কর্মীদের নিয়ে রুপা গাঙ্গুলি উপস্থিত হন থানায়। রুপা বলেন, “অভিযুক্তদের গ্রেফতারির প্রসঙ্গ তুলি। পুলিশ আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেনি। কিন্তু অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার বিষয়ে কোনও আশ্বাসও দেওয়া হয়নি। বলা হল, আইন আইনের পথে চলবে।” ছাত্র মৃত্যুর অভিযোগে কাউকে গ্রেফতার না করে বিজেপি নেত্রী রুপা মন্ডল সহ ৫ জনকে গ্রেফতার করায় জনরোষ বাড়তে থাকে। এদিকে রুপা গাঙ্গুলির স্পষ্ট কথা,”যতক্ষণ না প্রকৃত অপরাধী ধরা পড়ছে ও রুপা মন্ডলকে ছাড়া হচ্ছে তিনি ততক্ষণ থানায় অবস্থান করবেন। বৃহস্পতিবার সকলেও রুপা গাঙ্গুলির নেতৃত্বে বিজেপি কর্মীরা থানায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতেই প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশ ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের এই তীব্র ক্ষোভ কি কোনো অশুভ বার্তা দিচ্ছে প্রশাসনকে। এমনিতেই আর জি কর কাণ্ডে সরকারের অবস্থা প্রায় ‘ল্যাজে গোবড়ে’। তারমধ্যে চারিদিকে বিক্ষোভ বেড়ে চলেছে সরকারের বিরুদ্ধে। এই মুহূর্তের পরিবেশ কবি সুকান্তের ভাষায় – “বিদ্রোহ আজ, বিদ্রোহ চারিদিকে।”

Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Popular News

Latest News

ভারতীয় প্রাচীন সভ্যতার সঙ্গে মিলে আছে ৪ হাজার বছর আগের সিন্ধু সভ্যতার যুগ। এবার মানুষের সামনে তাই তুলে ধরতে চলেছে গুজরাট সরকার। …

আজ কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো। হিন্দু বাঙালিরা ঘরে ঘরে লক্ষ্মীর আরাধনায় ব্যস্ত। লক্ষ্মী বিনা সারা জগৎ অচল। আর লক্ষ্মীও বেশ চঞ্চলা। কোথাও অধর্ম, …

মুকেশ আম্বানি নিজেই একটা ইনডাস্ট্রি। বিশ্বের অন্যতম ধনকুবের। চাল, ডাল, তেল থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ, টেলিকম- সর্বত্রই ছড়িয়ে রয়েছে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রি। মুকেশ …

পাহাড় মানেই একরাশ আনন্দ। পাহাড়ের প্রতি বাঁকেই আছে নতুন জগৎ। তাই পাহাড় মানেই নতুন উন্মাদনা। তবে এখন একটু অফবিট ভ্রমণের দিকে ভ্রমণ …