একটা সময় ছিল যখন কালীপুজো ছিল প্রধানত ডাকাতদের পুজো। ঘোর অমাস্যার নিকষ কালো অন্ধকারের মধ্যে কালীপুজো দিয়েই ডাকাতের দল বেরিয়ে পড়তো ডাকাতি করতে। তারপরে সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সেই ডাকাতের পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু তেমন অনেক পুজো এখনও চলছে সমান তালে।
এই পুজো তালিকায় আমাদের প্রথমেই মনে আসে রঘু ডাকাতের কথা। এই রঘু ডাকাত নাকি কালীপুজো করেই ডাকাতি করতে যেত। সে একা নয়, তার দলের সকলেই। সেই গল্পকে ছুঁতে চাইলে একবার ঘুরে আসতে পারেন কাশীপুরের খগেন চ্যাটার্জি রোডের রঘু ডাকাতের কালী মন্দির থেকে। শোনা যায়, এই মন্দিরের চিত্তেশ্বরী সর্বমঙ্গলা কালী প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রঘু নিজে। মন্দির চত্বরে দেবী সর্বমঙ্গলা ছাড়াও রয়েছে তিনটি শিব মন্দির। একবার জলা অঞ্চলে দেবীমূর্তি ও মহাদেবের মূর্তি দেখতে পেয়েছিলেন রঘু ডাকাত। পরে দেবী তাঁকে স্বপ্নাদেশ দেন। সেই আদেশ মেনেই নাকি ওই মূর্তিকে অধিষ্ঠিত করেন তিনি। সেই পুজো কিন্তু এখনও চলেছে সমান উৎসাহে।
এর পরেই আমাদের স্মরণে আসে মনোহর ডাকাত। শোনা যায়, অধুনা মনোহরপুকুর রোডে পলাশীর যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ছিল ঘন জঙ্গল। সেখানে দাপিয়ে বেড়াতেন মনোহর ডাকাত। যে দর্শনার্থীরা কালীঘাট মন্দিরে যেতেন, তাঁদের ফেরার পথে আচমকাই জঙ্গলের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসত ডাকাতের দল। সর্বস্ব লুঠে নিত নিরীহ পথিকদের। এই মনোহর ডাকাত করতেন ছানা কালীর পুজো। সেই পুজো কিন্তু নতুন রূপে এখনও হয়ে চলেছে।
আরেক ডাকাত কালীপুজোর কথা না বললেই নয়, তিনি হলেন বিশে ডাকাত। তার নামের সঙ্গে জড়িয়ে বুনো কালীর মন্দির। হুগলীর ডুমুরদহের বিশে ডাকাতের ভয়ে কাঁপত সাধারণ গৃহস্থ। আবার দোর্দণ্ডপ্রতাপ ইংরেজ সরকারও থাকত তটস্থ। শোনা যায় নৌকায় চেপে হুগলী থেকে সদলবদলে একেবারে যশোর পর্যন্ত চলে যেতেন বিশে ওরফে বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। ডাকাতি করে গঙ্গার পাড়েই বিরাট বাড়ি তৈরি করেছিলেন তিনি। বিশে ডাকাতের প্রচলিত যেই পুজো কিন্তু এখনও করছেন স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মানুষেরা।