সামগ্রিক পরিস্থিতির আমূল কোনো পরিবর্তন হয় নি। হ্যাঁ, একথা ঠিক যে আর জি কর কান্ড নিয়ে মধ্যবিত্ত বাঙালি যেভাবে প্রতিবাদে পথে নেমেছে, তা হয়তো স্বাধীনতার পরে আর দেখা যায় নি। কিন্তু প্রশ্ন, সেই প্রতিবাদ কার বিরুদ্ধে? সবটা কি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে? মোটেও তা নয়, ওদের মূল শ্লোগান – ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। এই জাস্টিসের দাবি দুই সরকার, সমাজ, সাধারণ মানুষ সকলের কাছে। তাই এই ঘটনাকে ২০০৬-‘০৭ সালের সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা করা অর্থহীন। তবে এই নিয়ে আলোচনা চলেছে নাগরিক মহলে।
এবার একটু দেখে নেওয়া যাক উপনির্বাচনের ভূগোল। পাঁচ জেলা। ছয় আসন। উত্তরে কোচবিহারের সিতাই ও আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাটি। পশ্চিম মেদিনীপুরের মেদিনীপুর। বাঁকুড়ার তালডাংরা। আর উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়া ও নৈহাটি। এই ৬টি আসনের মধ্যে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে পাঁচটি জিতেছিল তৃণমূল। আর মাদারিহাট আসনটি জিতেছিল বিজেপি।
ইতিহাস বলছে, এই ৬টি আসনের মধ্যে হাড়োয়া আসনটি ২০১১ সাল থেকে তৃণমূলের দখলে। একুশের নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের ৫৭ শতাংশের বেশি পেয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। উত্তর ২৪ পরগনার আর এক আসন নৈহাটি রাজ্যে পালাবদলের সময় থেকে ঘাসফুল শিবিরের দখলে। মেদিনীপুর আসনটিও ২০১১ সাল থেকে ঘাসফুল শিবিরের দখলে। ২০১৬ সাল থেকে তালডাংরা আসনটি তৃণমূলের দখলে। উত্তরের কোচবিহারের সিতাই আসনে ২০২১ সালেই প্রথম জেতে তৃণমূল। তার আগে পরপর তিন বার সেখানে জিতেছিল কংগ্রেস। উত্তরের আর এক আসন মাদারিহাট ২০১৬ সাল থেকে বিজেপির দখলে। তার আগে প্রায় সাড়ে চার দশক আসনটি দখলে রেখেছিল আরএসপি। এই আসনে এখনও পর্যন্ত একবারও জেতেনি তৃণমূল।
এবার চতু্র্মুখী লড়াই। তৃণমূল স্বাভাবিকভাবেই ৬টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিজেপিও ৬টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। বামেদের সঙ্গে জোট না হওয়ার পর কংগ্রেস ৬টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে। আর বামেরা পাঁচটি আসনে লড়বে। হাড়োয়ায় প্রার্থী দিয়েছে আইএসএফ। ফলে ৬টি আসনেই চতুর্মুখী লড়াই। রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, বাংলায় অনেকদিন পর চতুর্মুখী লড়াই হচ্ছে।
একটা প্রশ্ন ভোট বিশ্লেষকদের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে,আরজি কর কাণ্ড ঘিরে জুনিয়র ডাক্তার ও সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের পর রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে। আরজি কর কাণ্ডের নিন্দা করে রাস্তায় নেমেছেন সাধারণ মানুষ। রাত দখল করেছেন মহিলারা। এবং শাসকদলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ লক্ষ করা গিয়েছে। আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন। এই ক্ষোভ কি ভোটবাক্স পর্যন্ত পৌঁছবে? আরজি কর কাণ্ডের প্রভাব কতটা পড়বে ভোটবাক্সে? এই বিষয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন,”আরজি কর ইস্যুতে সাধারণ মানুষ আন্দোলনের জন্য আন্দোলন করছেন, নাকি সরকার পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করেছেন, সেটাই প্রমাণিত হবে।” কুনাল ঘোষ বলেছেন, “যারা ইদানিং মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়াতে লাফাচ্ছে, সেই সিপিএম, লিখে রাখুন, ৬টাতেই আবার তৃতীয় বা চতুর্থ।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভময় মৈত্র বলেন,"উপনির্বাচনে মানুষ গণতান্ত্রিকভাবে সবসময় ভোট দিতে পারেন, তা তো নয়। তাছাড়া তৃণমূল কংগ্রেসের যে সাপোর্ট বেস-লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, এইসব প্রকল্পের সুবিধা যে নিম্নবিত্ত মানুষ পেয়েছেন, তাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আসায় কতটা ঘুরে যাবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আগের নির্বাচনগুলোতে এইসব প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছে তৃণমূল। ফলে একুশের নির্বাচনে এই ছয়টি আসনের ফলাফল বিপুল পরিবর্তনের সম্ভাবনা খুব একটা নেই।” সমস্ত বিশ্লেষণ ও বাঙালির সাধারণ রাজনৈতিক মেধা ব্যাখ্যা করে বলা যায় যে, শাসক দলের ভোট কিছুটা কমলেও হয়তো সিটের পার্থক্য খুব বেশি হবে না।